আজকে সেলেনা চলে যাচ্ছে, আমার উন সুন পার্টনার। তিন মাস ছিলো। বাবা চাইনিজ, মা জাপানিজ। জাতীয়তা অস্ট্রেলিয়ান। ওর মতো শক্ত মানুষ কম দেখেছি। ত্রিশ পার হয়েছে বছরখানেক আগে, বিয়ে করে নি এখনো। দেশে দেশে ঘোরাফেরা করেই কাটিয়েছে প্রায় এক দশক। গল্পে গল্পে এক বার বলে যখন ভ্যাঙ্কুভার ছিলাম, কিংবা যখন নিউএয়র্ক ছিলাম; আবার আসে জার্মানরা কেমন, ফ্রান্সের মানুষ কেমন, ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ ডিগ্রিকে প্রাধান্য দেয়, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইউকেতে এক্সপেরিয়েন্স প্রাধান্য দেয়, এমনকি আফ্রিকা আর সাউথ এমেরিকার কয়েকটা দেশেও গিয়েছে। প্রতিটা দেশে ৩-৫ মাসের জব নিয়ে যায়, এর বেশি থাকে না। জব গুলোও অদ্ভুত, অড জব কিংবা অটিস্টিক শিশুদের মেন্টাল থেরাপি, অস্ট্রেলিয়ায় প্রিজন ক্যাম্পে গুন্ডা গোছের প্রিজনারদের সোশ্যাল থেরাপি দেয়া - এরকম গোছের তার জব হিস্ট্রি।
মেয়েটার ওজন অনেক কম, তাই রেগুলার ওয়েট লিফটিং কিংবা মার্শাল আর্টের সাথে থাকার চেষ্টা করে হয়তো। নিজের জাতিকে দেখার ইচ্ছা থেকে চীন এসেছে। অফগ্রিডের একটা কুংফু স্কুলে এসে বাচ্চাদের মার খেতে দেখে অতিরিক্ত পার্সোনাল টেনশনে ভুগেছে কয়েক সপ্তাহ। আর যাইহোক, মেয়েটা শিশু কিংবা জেলবাসীদের মানসিক দিক নিয়ে কাজ করেছে বেশি। তাই, পুর্বের মানুষের কাছে ছোটবেলায় মার খাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে -সেটা মানতে পারছে না।
এর মধ্যে ইউনিসেফকে দুইবার মেইল করে জানিয়েও দিয়েছে যে, এরকম কুংফু স্কুলে চাইনিজ বাচ্চারা যারা বোর্ডিং এ থাকে তাদের কড়া পানিশ্মেন্ট দেয়া হয়। কিছু একটা করেছে বলে - নিজের কাছে যতখানি সান্ত্বনা দেয়া যায় আরকি।
সেলেনাকে দেখে মানুষের অনেক দিক টের পেয়েছি। কিছু মানুষ বাইরে থেকে অনেক স্ট্রং, কিন্তু ভেতরে অনেক মায়া। সেলেনা অনেক ট্রাভেল করেও তার বেশির ভাগ ট্রাভেলগুলো হয় প্ল্যান ছাড়া। তার ম্যাক্সিমাম প্ল্যান হচ্ছে, "গেট আ জব ফার্স্ট, দেন গেট আ নাইস অ্যান্ড চিপ প্লেস, প্যাক অ্যান্ড গো"। এই যেমন চায়নায় এসেছে ভিপিএন না নিয়েই। ভুলে গিয়েছিলো নাকি।
"ফ্যামিলির সাথে কন্টাক্ট করেছো কিভাবে?" "৭-৮ দিন আগে মেইল করেছিলাম। মার সাথে কথা বলেছি।" "৭-৮ দিন?" "হুম" "মেইল?" "হুম। কেন?" "না মানে, আমি একদিন কন্টাক্ট না করলেই আম্মুর ঘুম হারাম হয়ে যায়।" "সো, ইউ মেইল এভ্রিডে?" "নো। আই কল এভ্রিডে।" "ওহ।"
যখন জিজ্ঞাসা করলাম, ভিপিএন ছাড়া, গুগল ম্যাপ কিংবা ট্রান্সলেটর ছাড়া বেইজিং থেকে সিপিং কি করে আসলে?
তখন বললো, "এয়ারপোর্টে নেমেই কাগজের ম্যাপ কিনে নিয়েছি। সাধারণত, গুগল কিংবা ফোন বেশি ইউজ করি না। কাগজের ম্যাপ নেই, মানুষকে জিজ্ঞাসা করি। অন্য ভাষার ক্ষেত্রে আগে থেকে লিখে নেই একটা কাগজে যত প্রশ্ন থাকে।"
তারপর অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "হারিয়ে যাবার ভয় নেই?" তখন বলে, "নাহ! ম্যাপ ঠিক থাকলে হারায় কিভাবে?" তারপর আবার বলি, "যদি মাগড হও?" তখন বলে, "একবার রুমমেট চুরি করেছিলো। সেটাই একমাত্র ব্যাড এক্সপেরিয়েন্স।"
তারপর কিছুক্ষণ ভাবলাম। কেন আমার কিংবা আমার কাছের মানুষগুলোরই শুধু টেনশন হয়, "যদি কেউ ছিনতাই করে? যদি কেউ ধরে নিয়ে যায়? একা একা কিভাবে থাকবে? ব্লা ব্লা ব্লা"
এসব ভাবনা শুরুতে আমারও হতো।
একবার প্রথম মাসে বাজার করতে যাবার জন্য বাসের অপেক্ষা করছিলাম। স্কুলটা অফগ্রিডে। মানে, সবচেয়ে কাছের বাজার ১৭কিমি দূরে। বাস কিংবা লিফট লাগবেই। বাস আসতে আরও ৩০মিনিট। এমন সময় একটা গাড়ি থেমে বললো টাউনে যাবো কিনা। এখানে গাড়িগুলোই ট্যাক্সি, যেগুলো ভিলেজের মানুষগুলোরই, স্কুলের ফরেনারদের সবাই চিনে ফেলে, ট্যাক্সিগুলো নিজে থেকেই এগিয়ে আসে, জানে হয়তো টাউনে যাবো নয়তো টাউন থেকে স্কুলে ব্যাক করবো, চাইনিজে বেশি কিছু বলতে হয়না। বললাম, "ভাড়া কতো?" বলল, "৫" প্রায় বাস ভাড়ার মতো দেখে উঠে পড়লাম। কিছু দূর যাবার পর যখন দেখলাম টাউনে যাবার পথ না ধরে অন্য একটা পথ ধরেছে, তখন দেখালাম- উল্টো দিকে যাচ্ছে তো। এরপর চাইনিজে কি বললো বুঝলাম না। গুগল ম্যাপ অনুযায়ী, উল্টো দিক দিয়ে টাউনে যাওয়া যায় না। আমারও ভেতরে ভেতরে ভয় লাগা শুরু হলো। কোথায় নিচ্ছে বুঝতে না পারা কিংবা চায়নিজ না বোঝা - যেটাই হোক কারণটা।
আর একটু পর থেমে যেতে বলবো এমন সময় দেখি, একটা হাউজিং কমিউনিটিতে ঢুকেছে গাড়ি। ৪-৫ টা বাচ্চা অপেক্ষা করছিলো ব্যাগ আর স্কুল ইউনিফর্ম নিয়ে। দুইজন আবার ইউনিফর্ম ছাড়া শুধু বইয়ের ব্যাগ। ওরা দ্রুত গাড়িতে উঠলো। উঠেই বলে, "নি হাও!" আর পিচ্চি মেয়েটা আমার লিপস্টিক দেখেই বলে, "ওয়াআআআও!" বুঝলাম ওরাও টাউনের স্কুলে যাবে। হয়তো প্রতিদিন এই প্রাইভেট কারে করেই যায়। এলাকায় মানুষ কম। সবাই সবাইকে চেনে, তাই হয়তো নিজস্ব ডিল থকে, আমাদের দেশের স্কুল গাড়ির মতো। তারপর গাড়ি ঘুড়ালো। এবার টাউনের পথে। গন্তব্য - ইয়েহে।
এরপর চেনা পথেই যাচ্ছিলো। কিন্তু এরপর পুরোটা সময় খুব লজ্জা লেগেছে। লজ্জা লেগেছে কারণ, আমি ভয় পেয়েছিলাম। লজ্জা লেগেছে কারণ, সা'দকে বলেছিলাম 'লাইনে থাকো'। সা'দ প্রায় ১৫ মিনিট লাইনে ছিলো। ওর সাথে বকবক করছিলাম আর ভান করছিলাম যে আসলে ভয় পাচ্ছিনা। লজ্জা লেগেছে কারণ, আমি এমন একটা জাতির মাঝে থেকে বড় হয়েছি যে জাতি শুধু ভয় পেতে শিখিয়েছে, সিকিউরিটি সেন্সরকে ওভার একটিভ করে ছেড়ে দিয়েছে।
সেলেনার ভাবনা দেখে আর নিজের ওভার একটিভ সেন্স অফ সিকিউরিটি দেখে বুঝলাম, "অন্য মানুষের উপর আস্থা কতখানি সেটাই প্রমাণ করে তুমি কোথা থেকে এসেছো। সামান্য চাইল্ড পানিশমেন্ট দেখেই ইউনিসেফে দুইবার মেইল করা দেশ থেকে? নাকি বাসে রেগুলার রেইপ আর রেগুলার চাইল্ড রেপকে নরমাল ভাবা দেশ থেকে?"
ভিডিওতে দেখলাম, আমাদের বয়স্ক টিচারকেও গাড়িতে চড়ার সময় শাড়ি ধরে টান দিয়েছে। হাসনা মিসের জামিন না মঞ্জুর করেছে। এসব নিয়ে লিখবো না ঠিক করেছিলাম শহীদূল আলমের পরই। অগাস্টে ঠিক করেছিলাম, বাংলায় লিখা বন্ধ এখন থেকে। কাল হাসনাহেনা মিসকে দেখে ঠিক করলাম, শেখানোর সব ডিলও বন্ধ (মারজিয়া প্রভাকে বলেছিলাম এসে শেখাবো ফিমেলদের, কোন একটা প্রজেক্টে)। কিছু কিছু ব্যাপার ইংলিশে লিখা যায় না। যারা বাংলা জানে না তাদের কাছ থেকে লুকাতে হয়।
বি.দ্র. সেলেনার ফেবু আইডি নাই। তাই ট্যাগ দিতে পারলাম না।
This was originally posted on facebook on December 7, 2018
Those who wanted to know what this post is about and if I will post it in English later--This post is about Selena, my friend and Wing Chun partner when I was in my Kung Fu school in China.
I might re-write in English later when I can manage time. I can't give a word thought. If I do re-post it in English, it will be on my personal tab in the labels.
Comments
Post a Comment